top of page

ভারতের সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামে 'ক্ষুদিরাম'।

  • Writer: ইত্যাদি ব্লগ
    ইত্যাদি ব্লগ
  • Aug 11, 2020
  • 3 min read

Updated: Aug 12, 2020


পিঙ্গলা পাণ্ডে ভট্টাচার্য

 



“... একটি ছেলেকে দেখার জন্যে রেল স্টেশনে ভিড় জমে যায়। ১৮ অথবা ১৯ বছরের এক কিশোর, অথচ তাঁকে রীতিমতো দৃঢ় দেখাচ্ছিল। বাইরে তার জন্যেই রাখা এক চারচাকার খোলা গাড়ি। প্রথম শ্রেণীর এক রেল কামরা থেকে বেরিয়ে সে হেঁটে আসছিল। এক উৎফুল্ল কিশোরের মতো - যে কোনো উদ্বেগ জানেনা....

গাড়িতে নির্দিষ্ট আসনে বসার সময় ছেলেটা চিৎকার করে বলে উঠল 'বন্দেমাতরম্'।"

- 'দ্য স্টেটসম্যান', ২ মে- ১৯০৮।

কোলকাতা - ১৯০৮। মিঃ কিংসফোর্ড আলিপুর প্রেসিডেন্সি বিচারালয়ের মুখ্য হাকিম। তার এজলাসে চলছে ‘যুগান্তর মামলা’। আসামী যুগান্তর পত্রিকার সম্পাদক ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত এবং অন্যান্য সংবাদপত্র লেখকরা। বিচারে সম্পাদক ভূপেন্দ্রনাথ দত্তের কঠিন সাজা হয়। সরকারের বিচার ব্যাবস্থা নিয়ে বিরুদ্ধ মত লেখার জন্য আরো পাঁচজনকে অভিযুক্ত করেন কিংসফোর্ড।


বিরাট আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয় 'যুগান্তর' পত্রিকা। 'অনুশীলন সমিতি' ও তার জাতীয়তাবাদী বিপ্লবী আদর্শ প্রচারের প্রধান হাতিয়ার ছিল এই সংবাদপত্র। কিংসফোর্ড সাহেব শুধু মাত্র মিথ্যা বিচারে সাজা শুনিয়েই ক্ষান্ত ছিলেন না, এই মামলার বিরুদ্ধে প্রচারে অংশ নেওয়ায়, বিপ্লবীদের প্রকাশ্যে চাবুক মারা হয়েছিল। আলিপুর প্রেসিডেন্সি আদালতে মুখ্য হাকিম হিসেবে কাজে যোগ দেওয়ার সময় থেকেই বিপ্লবীদের উদ্দেশ্যে অশালীন এবং সন্মানহানীকর মন্তব্য করতেন কিংসফোর্ড। তিনি মিথ্যে বিচারে বিপ্লবী আর তাদের সহকারীদের শারীরিক নির্যাতনের সাজা ঘোষণা করতেন। 'অনুশীলন সমিতি' বাধ্য হয়ে কিংসফোর্ডকে মারার পরিকল্পনা করে। হেমচন্দ্র দাস কানুনগো এবং সত্যেন্দ্রনাথ বসুকে দায়িত্ব দেওয়া হয় বোমা বানানোর।


১৯০২ সালে শ্রী অরবিন্দ এবং সিস্টার-নিবেদিতা মেদিনীপুর ভ্রমণ করেন। তাঁরা স্বাধীনতার জন্যে জনসমক্ষে ধারাবাহিক বক্তব্য রাখেন এবং বিপ্লবী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে গোপন অধিবেশন করেন। খুব ছোট বয়সেই তমলুকের এই রকম এক জনসভাতে ক্ষুদিরাম বসুর বিপ্লবী সত্ত্বার প্রকাশ ঘটে। কিশোর ছাত্র ক্ষুদিরাম, এই সমস্ত বিপ্লবী আলোচনায় সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে থাকেন। সত্যেন্দ্রনাথ বসুর শিক্ষা এবং শ্রীমদ্ভগবদগীতার পাঠ, ব্রিটিশ উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে বিপ্লব করতে তাঁকে অনুপ্রাণিত করে।১৯০৪ সালে তিনি তমলুক থেকে উচ্চ শিক্ষার জন্য মেদিনীপুরে চলে আসেন। মেদিনীপুরেই ক্ষুদিরামের সক্রিয় বিপ্লবী জীবনের অভিষেক। ‘অনুশীলন সমিতি’ তে যোগদান করলেন ক্ষুদিরাম।


১৯০৮ সালের মার্চ মাসে নিরাপত্তার প্রয়োজনে কিংসফোর্ডের পদোন্নতি করে, ব্রিটিশ সরকার তাকে বিহারের মুজাফফরপুর জেলার বিচারপতি করে বদলি করেন। অন্যদিকে কিংসফোর্ডকে শাস্তি দেবার অনুশীলন সমিতির বিপ্লবীদের যে পূর্বপরিকল্পনা, তার দায়িত্ব পড়লো প্রফুল্ল চাকীর উপরে। হেমচন্দ্রের বানানো বোমা নিয়ে মুজাফফরপুর যাওয়ার সিদ্ধান্ত হল। প্রফুল্ল চাকী সঙ্গে নিয়ে এলেন একজন নতুন ছেলেকে। নাম ক্ষুদিরাম বসু।

২৯ এপ্রিল সন্ধ্যায় মুজাফফরপুর ব্রিটিশ ক্লাবের পাশে অপেক্ষাতে দুই বিপ্লবী, হাতে ডিনামাইট দিয়ে তৈরি শক্তিশালী সেই বোমা। রাত্রি সাড়ে আট টা নাগাদ কিংসফোর্ডের গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা ছোড়া হয়। দুর্ভাগ্য, গাড়িতে কিংসফোর্ডের বদলে ছিল অন্য একজন ব্রিটিশ ব্যারিস্টারের মেয়ে এবং স্ত্রী। দুজনেরই মৃত্যু হয়। মোকামাঘাট রেল স্টেশনে প্রফুল্ল চাকী ধরা পরলে নিজের রিভলভার থেকে গুলি করে মৃত্যু বরণ করেন। ওয়াইনি নামে এক স্টেশনে ধরা পরেন ক্ষুদিরাম। ১৯০৮ - এর ২১ মে , আলিপুর বোমা মামলা শুরু করে ব্রিটিশ সরকার। বিচারে ফাঁসি দেওয়া হয় ক্ষুদিরাম বসু কে।


শুধু এখানেই শেষ নয়। পরবর্তীতে মুরারিপুকুরের বাগানবাড়ি তল্লাশী করে পুলিশ বোমার কারখানা আবিষ্কার করে। অরবিন্দ ঘোষ, হেমচন্দ্র সহ প্রায় ৩৭ জন বিপ্লবী ধরা পরেন। প্রায় এক বছর ধরে বিনা প্রমাণে বন্দী করে রেখে বিচার চালিয়ে যাওয়া হয়। মামলা তে যাবজ্জীবন সহ দ্বীপান্তরের সাজা দেওয়া হয়েছিল। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে প্রত্যক্ষ ভাবে নেতৃত্ব দেওয়া বাঙালি বিপ্লবীদের ধরে রেখে ব্রিটিশ সরকার এই ভাবে, বিপ্লবী কর্মকাণ্ডকে কঠোর হাতে দমন করতে চেয়েছিল।


ফাঁসি হওয়ার সময় ক্ষুদিরামের বয়স ছিল ১৮ বছর, ৭ মাস এবং ১১ দিন, যেটা তাকে ভারতের কনিষ্ঠতম বিপ্লবীর অভিধা দিয়েছিল। ক্ষুদিরাম বসুর ফাঁসি ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনে নতুন একটি অভিমুখ তৈরি করল। এই ঘটনা শুধু মাত্র কোলকাতা বা বঙ্গদেশে নয়, সারা ভারতবর্ষে গভীরভাবে প্রভাব বিস্তার করেছিল। নতুন করে সারা ভারতে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সহিংস আন্দোলনকে সংগঠিত করার ক্ষেত্র বিস্তার করেছিল এবং অত্যাচারিত ভারতীয়দের ব্রিটিশ শক্তির বিরুদ্ধে আন্দোলনমুখী করে তুলল। যদিও মহাত্মা গান্ধী ক্ষুদিরামকে সর্মথন করেননি, তিনি ইংরেজদের বিরুদ্ধে এই হিংসাকে নিন্দা করেন। তার এই বৈপরীত্যকে বহু বিপ্লবীরা ভালো করে নেন নি। এক সময় সারা ভারতে ব্রিটিশ শক্তির বিরুদ্ধে সহিংস আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। বাল গঙ্গাধর তিলক, তার সংবাদপত্র ‘কেশরীতে’ যুবক ক্ষুদিরাম বসু আর প্রফুল্ল চাকীর আন্দোলনের অভিমুখকে সমর্থন করে অবিলম্বে 'পূর্ণ স্বরাজের' দাবী তোলেন।


ভারতের স্বাধীনতার আন্দলনে শুরু হয় এক নতুন অধ্যায়। অহিংস আন্দলোনের পাশাপাশি, সহিংস সশস্ত্র বিপ্লবও যে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনে একটি অন্যতম পথ হতে পারে তা ক্ষুদিরাম তথা প্রফুল্ল চাকীরাই দেখিয়ে দিয়ে গেলেন ভারতবাসীকে। আর সেই পথে পরবর্তীতে ভগত সিং, রাজগুরু, আজাদ দের আত্মপ্রকাশ। এইভাবেই ক্ষুদিরাম হয়ে গেলেন চরমপন্থী স্বাধীনতা আন্দোলনের পথিকৃৎ।

অমর হয়ে গেলেন সর্বকনিষ্ঠ স্বাধীনতা সংগ্রামী ক্ষুদিরাম বসু।


১১ই আগস্ট, ১৯০৮ সাল – এই দিনেই ফাঁসির মঞ্চে হাসতে হাসতে প্রাণ দিয়েছিলেন শহীদ ক্ষুদিরাম।

শহীদ ক্ষুদিরাম 'অমর রহে'।

Comentarios


  • Facebook
  • Twitter

ইত্যাদি ব্লগ 

© 2023 by Ityadi.org

Proudly created with Wix.com

এই ব্লগ সাইট এর শর্তাবলী (Terms & Condition)

https://bit.ly/3fvaWkU

(এই লিঙ্ক এ ক্লিক করুন) 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন 

Thanks for submitting!

bottom of page